১০ অক্টোবর ২০২৫ , ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

প্রচন্ড চাপে প্রেসিডেন্ট

ফ্রান্সে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ধর্মঘট

ইউরো বার্তা ডেস্ক
আপলোড সময় : ১৯-০৯-২০২৫
ফ্রান্সে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ধর্মঘট
ফ্রান্সে কৃচ্ছ্রতা বিরোধী প্রতিবাদ ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে লাখো মানুষ। তারা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ এবং তার নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্টিয়ান লুকোনুকে সতর্ক করে বলেছে, বাজেট কাটছাঁটের পরিকল্পনা থেকে তাদেরকে সরে আসতে হবে। শিক্ষক, ট্রেন চালক, ফার্মাসিস্ট, হাসপাতালের কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ধর্মঘটে যোগ দেন।

এ সময় কিশোররা কয়েক ডজন হাই স্কুলও কয়েক ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে রাখে। বিক্ষোভকারীরা আগের সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা বাতিল, সরকারি খাতে বাড়তি ব্যয়, ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি এবং অবসরের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। “ক্ষোভ প্রবল, আর দৃঢ়তাও তেমনই।

লুকোনু সাহেবকে আজ আমার বার্তা হল—বাজেট নির্ধারণ করবে জনগণ। রাস্তায় জনগণের আন্দোলনই বাজেট নির্ধারণ করবে।” বলেন শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন সিজিটি-র প্রধান। সংগঠনটি দাবি করেছে, শুধু বৃহস্পতিবারই ১০ লাখ মানুষ ধর্মঘট ও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের হিসাবে সংখ্যাটি এর অর্ধেকের মতো। বাজেট নিয়ে সরকারকে চাপ: নতুন প্রধানমন্ত্রী লুকোনু আগামী বছরের বাজেট প্রণয়ন এবং নতুন সরকার গঠনে ব্যস্ত। এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) তিনি লিখেছেন, “আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আবার ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে বৈঠক করব। তাদের দাবি আমি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।”

মাক্রোঁ ও লুকোনু একদিকে বিক্ষোভকারী ও বামপন্থি দলের চাপের মুখে, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বাজেট ঘাটতি নিয়ে। বিভক্ত পার্লামেন্টে কোনো দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফ্রান্সের প্রধান প্রধান ইউনিয়নগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে আগের সরকারের অন্যায্য আর্থিক পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আমরা যে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করি, তারা খুবই ক্ষুব্ধ। “এটা নতুন প্রধানমন্ত্রী লুকোনুর জন্য একটি সতর্কবার্তা, স্পষ্ট সতর্কবার্তা,” বলেছেন সিএফডিটি ইউনিয়নের প্রধান মারিলিস লেওন। “আমরা একটি সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত বাজেট চাই।” শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবহন খাতে প্রভাব সারা দেশে তিন ভাগের এক ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ধর্মঘটে অংশ নেন। রাজধানী প্যারিসে প্রায় অর্ধেক শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করেন বলে জানিয়েছে এফএসইউ-এসএনইউইপ ইউনিয়ন। আঞ্চলিক ট্রেন চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়, যদিও দ্রুতগামী টিজিভি ট্রেনের বেশিরভাগই সচল ছিল। প্যারিসে কালো পোশাক পরিহিত বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে বোতল ও পাথর ছুড়লে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। ব্যাংক লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টাও ঠেকানো হয়।

নঁত এবং লিঁয়ঁসহ আরও কয়েকটি শহরে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। লিঁয়ঁতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি গণমাধ্যম। গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ চলাকালে ১৮০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় ৮০ হাজার পুলিশ ও জেন্ডার্ম। সঙ্গে ছিল দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বাহিনী, ড্রোন ও সাঁজোয়া যান। ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৩ শতাংশ সীমার প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছায়। সেই ঘাটতি কমানোর ইচ্ছা থাকলেও লুকোনু জানেন, পার্রামেন্টে সমর্থন জোগাড় করা কঠিন হবে। এর আগে পার্লামেন্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরুকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর বাজেট সংকোচনের পরিকল্পনা নিয়ে। নতুন প্রধানমন্ত্রী এখনও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি। তবে তিনি সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছেন।


কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ